Sunday, May 5, 2024
Homeসংবাদ ও প্রেস বিজ্ঞপ্তিপার্টি সংবাদসমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের ৯৮তম বার্ষিকী ও বাসদ (মার্কসবাদী) ৩৫তম প্রতিষ্ঠা দিবসের ডাক

সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের ৯৮তম বার্ষিকী ও বাসদ (মার্কসবাদী) ৩৫তম প্রতিষ্ঠা দিবসের ডাক

গণআন্দোলনই অধিকার আদায়ের একমাত্র পথ

ফ্যাসিবাদী দুঃশাসনের বিরুদ্ধে গণতান্ত্রিক অধিকার রক্ষায় বামপন্থীদের নেতৃত্বে আন্দোলন গড়ে তোল

12186609_980711688618710_3231399441946640320_o

১৯১৭ সালের ৭ নভেম্বর রাশিয়ায় বিপ্লবের মাধ্যমে দুনিয়ার ইতিহাসে প্রথম সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। গণঅভ্যুত্থানে জার সম্রাট-অভিজাতবর্গ-জমিদার-পুঁজিপতি শোষকশ্রেণীকে ক্ষমতাচ্যুত করে শ্রমিক-কৃষকের সরকার কায়েম হয়েছিল মহামতি লেনিনের নেতৃত্বে। মুষ্টিমেয় মালিকের মুনাফার পরিবর্তে সংখ্যাগরিষ্ঠ শ্রমজীবী মানুষের প্রয়োজন মেটানোর লক্ষ্যে পরিকল্পিত অর্থনীতি গড়ে তোলা হয়েছিল। অতি অল্প সময়ের মধ্যে পশ্চাদপদ রাশিয়া পরিণত হয়েছিল শিল্পোন্নত দেশে। সবার জন্য শিক্ষা-চিকিৎসা-বাসস্থান-কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হয়েছিল, বয়স্ক-অনাথ-পঙ্গু-অক্ষমদের দায়িত্ব রাষ্ট্র নিয়েছিল, মানব ইতিহাসে প্রথমবারের মতো বেকারত্ব-ভিক্ষাবৃত্তি-পতিতাবৃত্তি নির্মূল করা সম্ভব হয়েছিল। শুধু তাই নয়, দুনিয়া জুড়ে সাম্রাজ্যবাদী আগ্রাসন-যুদ্ধের বিরুদ্ধে সাম্য-প্রগতি-গণতন্ত্র ও জাতীয় মুক্তি আন্দোলনের পক্ষে দাঁড়িয়েছিল রাশিয়া। কমরেড স্ট্যালিন ও কমিউনিস্ট পার্টির নেতৃত্বে সোভিয়েত জনগণ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে অপরিসীম আত্মত্যাগের বিনিময়ে নাৎসি জার্মানিকে পরাজিত করে দুনিয়াকে ফ্যাসিবাদের বিপদ থেকে রক্ষা করেছিল। এভাবে, নভেম্বর বিপ্লব মানুষের মুক্তির সংগ্রামের ইতিহাসে নতুন যুগের সূচনা করেছিল।

রুশ বিপ্লবের এক বিরাট তাৎপর্য হলো এই যে তা বিশ্বে সমাজতান্ত্রিক শিবিরের পত্তন ঘটায়। রুশ বিপ্লবের পূর্বে সাম্রাজ্যবাদী শক্তিসমূহ যেভাবে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের উপর আক্রমণ, আগ্রাসন চালিয়ে যাচ্ছিল, যুদ্ধ চাপিয়ে দিচ্ছিল ; সমাজতান্ত্রিক শিবিরের উত্থানের পর সাম্রাজ্যবাদী শক্তিসমূহ বাধাহীনভাবে তা আর চালিয়ে যেতে পারলোনা। সমাজতান্ত্রিক শিবিরের ক্রমশ শক্তি সঞ্চয় সাম্রাজ্যবাদীদের একক আধিপত্য খর্ব করে এবং পৃথিবীতে ভারসাম্য নিয়ে আসে। তাই বিশ্বশান্তি রক্ষার ক্ষেত্রে রুশ বিপ্লবের গুরুত্ব সীমাহীন। দুনিয়ার লক্ষ কোটি শোষিত-নিপীড়িত মানুষ যারা পুঁজিবাদ-সাম্রাজ্যবাদের নির্মম আগ্রাসন ও তাদেরই বাজার দখলের জন্য চাপিয়ে দেয়া যুদ্ধে ক্ষত-বিক্ষত হচ্ছিল, রুশ বিপ্লব তাদেরকে পথ দেখিয়েছিল, দুনিয়াতে শান্তি ফিরিয়ে এনেছিল। সমাজতান্ত্রিক শিবিরের অনুপস্থিতির কারণে আজ গোটা বিশ্বে যুদ্ধ-বিগ্রহ-জাতিগত দাঙ্গা লেগেই আছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালীন সময়ের চেয়ে বেশি সংখ্যক লোক আজ উদ্ধাস্তু হয়ে এক দেশ থেকে আরেক দেশে যাচ্ছে, যেতে গিয়ে মরছে, এসকল ঘটনা আবারও রুশ বিপ্লবের মহত্ত্বকে ঊর্ধ্বে তুলে ধরছে। রুশ বিপ্লবের মধ্য দিয়ে গোটা মানবসমাজের প্রতি দায়বোধসম্পন্ন এক মহান জাতি গড়ে উঠেছিল, যারা সেদিন গোটা মানবজাতির অভিভাবকরূপে দাঁড়িয়ে বিরাট আত্মত্যাগের মধ্য দিয়ে তাকে রক্ষা করেছিল, আজ সে ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি ব্যতীত এই মৃত্যুপ্রবাহ আটকানো যাবেনা, পৃথিবীতে শান্তি আসবেনা।

শোষণমূলক পুঁজিবাদী ব্যবস্থায় শতকরা ১ ভাগ সুবিধাভোগী, বাকি ৯৯ ভাগ বঞ্চিত। গোটা পুঁজিবাদী ব্যবস্থা আজ মন্দায় আক্রান্ত। কোন দেশেই এ ব্যবস্থা আজ আর বিকাশমান নয়। সব দেশেই শিক্ষা ব্যয়, মানুষের জীবন যাপনের ব্যয় বাড়ছে। মানুষের জীবনে অভাব-অনিশ্চয়তা বাড়ছে। এখন এ ব্যবস্থা টিকে থাকার জন্য অর্থনীতির সামরিকীকরণ ঘটাচ্ছে, অস্ত্র বিক্রি করা ছাড়া তার আর টিকে থাকার কোন পথ নেই। তাই সাম্রাজ্যবাদী ষড়যন্ত্রে যুদ্ধ-আগ্রাসন-হানাহানি চলছে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে। কৃত্রিমভাবে বাজার সম্প্রসারণের লক্ষ্যে ভোগবাদকে উস্কে দেয়া হচ্ছে মিডিয়ার মাধ্যমে, মানুষকে চিন্তাহীন করে রাখতে ও প্রতিবাদের শক্তিকে নষ্ট করতে মাদক ও পর্ণোগ্রাফি ছড়িয়ে দেয়া হচ্ছে। যেকোন উপায়ে টাকা রোজগারের প্রতিযোগিতায় উদয়াস্ত ছুটছে মানুষ, সামাজিক চেতনা-মূল্যবোধহীন আত্মকেন্দ্রিক মানসিকতাকে উৎসাহিত করা হচ্ছে। ফলে বাড়ছে সামজিক অবক্ষয়, অপরাধপ্রবণতা। এতকিছুর পরও বাস্তব জীবনের সংকটে জর্জরিত মানুষ সময়ে সময়ে প্রতিবাদে ফেটে পড়ছে, স্বতঃস্ফূর্ত বিক্ষোভ-আন্দোলন গড়ে উঠছে।

আমাদের দেশের চিত্রও আলাদা নয়। দেশের অল্প সংখ্যক পুঁজিপতি হাজার হাজার কোটি টাকার মালিক হয়েছে। সাম্রাজ্যবাদী মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানীগুলোর চোখও এখন এ দেশের দিকে। কারণ এদেশ সস্তা শ্রমের এক বিরাট ক্ষেত্র। তাই তাদের সর্বোচ্চ মুনাফা অর্জনের জন্য এদেশের সস্তা শ্রমকে তারা কজে লাগাতে চায়। এরা এদেশের বিগ বিজনেস হাউজগুলির সাথে কোলাবোরেশনে এ কাজটি করবে। এ জন্য আপেক্ষিক অর্থে একটি স্থিতিশীল রাজনৈতিক অবস্থা সৃষ্টির জন্য দেশী-বিদেশী পুঁজিপতিরা একতরফাভাবে আওয়ামী লীগকে নিয়ে এসেছে একটি ভোটের নাটকের মাধ্যমে। আর আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে তাদের সে প্রয়োজন মেটানোর কাজ করে চলেছে সূচারুরূপে। বিরোধী মতকে নির্মমভাবে দমন করছে, কোন প্রতিবাদকেই তারা সহ্য করছেনা। দেশের সর্বনি¤œ স্তর পর্যন্ত সামন্য প্রতিবাদও যাতে মাথা তুলতে না পারে সেজন্য তারা স্থানীয় নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী ও প্রতীকে নির্বাচনের ঘোষণা দিয়েছে এবং সকল জায়গায় তাদের দলের প্রার্থীকে নির্বাচিত করার আয়োজনও সম্পন্ন করেছে। এমন ফ্যাসিবাদী শাসনে জনগণ পূর্বে কখনও প্রত্যক্ষ করেনি।

পুঁজিপতিদের স্বার্থে, তাদের লুটপাটের জন্য সবরকম ছাড় এ সরকার দিচ্ছে। মানুষ দেখছে আন্তর্জাতিক মূল্যের চেয়ে কয়েকগুণ বেশি খরচ করে মহাসড়ক-সেতু-ফ্লাইওভার করা হচ্ছে। বিদ্যুৎ উৎপাদন বৃদ্ধির নামে রেন্টাল-কুইক রেন্টাল প্ল্যান্ট করে বিদ্যুৎ ব্যবসায়ীদের পকেট ভরা হচ্ছে আর বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হচ্ছে। উন্নয়নের নামে রামপাল কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র করে সুন্দরবন ধ্বংসের ঝুঁকি তৈরি করা হচ্ছে। সামরিক বাহিনী, পুলিশ, সরকারী আমলা এদের জন্য বেতন-বরাদ্দ বাড়ছে, অস্ত্র কেনা হচ্ছে। তেলের দাম কমাচ্ছে না, বিদ্যুৎ-গ্যাসের বিল বাড়াচ্ছে। গাড়িভাড়া-বাড়িভাড়া বেড়ে মূল্যবৃদ্ধির চাপে জর্জরিত মানুষের খরচ বাড়ছে। ‘উন্নয়নের জোয়ার’-এ ভেসে এদেশের বেকার যুবকরা বিদেশ পাড়ি দিতে গিয়ে সাগরে ডুবে ও গণকবরে মরছে। কৃষকরা ফসলের দাম না পেয়ে রাস্তায় ধান-আলু ফেলে প্রতিবাদ করছেন। গার্মেন্টস শিল্পের আয় বাড়ছে, কিন্তু শ্রমিকরা মানুষের মতো বাঁচার উপযোগী মজুরি পাচ্ছে না। মানুষের জীবনে নিরাপত্তাহীনতা বাড়ছে, বিদেশিরা খুন হচ্ছেন, শিয়া মসজিদে বোমা হামলা হচ্ছে। মত প্রকাশের দায়ে ব্লগারদের খুন করা হচ্ছে। নারী নির্যাতন-শিশু নির্যাতন সীমা ছাড়িয়েছে। প্রতিবাদ করতে গেলেই নেমে আসছে দমন-পীড়ন। টাঙ্গাইলে বিক্ষোভকারীদের গুলি করে হত্যা ও সম্প্রতি গণতান্ত্রিক বাম মোর্চার সুন্দরবন রোডমার্চে পুলিশি বাধা-হামলা এর সর্বশেষ নজির।

এই পরিস্থিতি প্রমাণ করছে — বিশ্বজুড়ে বাজার অর্থনীতি ও পুঁজিবাদী ব্যবস্থার রক্ষক শাসক দলগুলো অল্পসংখ্যক ধনীদের স্বার্থ রক্ষা করছে, সংখ্যাগরিষ্ঠ সাধারণ মানুষের অধিকার কেড়ে নিচ্ছে। এই অন্যায় ব্যবস্থাকে রক্ষার প্রয়োজনে তারা গণতান্ত্রিক অধিকার সংকুচিত করতে চাইছে, দমন-পীড়ন চালাচ্ছে। পাশাপাশি মানবিকতা-নৈতিকতা ধ্বংস করছে, ধর্ম-বর্ণ-জাতিগত বিদ্বেষকে উস্কে দিয়ে শোষিত জনসাধারণের ঐক্য বিনষ্ট করতে চাইছে। ফলে, পুঁজিবাদ-সাম্রাজ্যবাদ যে অর্থনৈতিক-রাজনৈতিক-সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংকটের মধ্যে মানবজাতিকে নিক্ষিপ্ত করেছে, তার বিরুদ্ধে লড়াই করা ছাড়া মনুষ্যত্ব নিয়ে বাঁচা যাবে না। সমাজতন্ত্রই মানুষের মুক্তির একমাত্র পথ — নভেম্বর বিপ্লব ও তার পরবর্তী অভিজ্ঞতা তাই প্রমাণ করে।
আওয়ামী লীগ-বিএনপি-জাতীয় পার্টি-জামাত এদের মধ্যে রাষ্ট্রক্ষমতার যতই পালাবদল ঘটুক, ব্যবস্থার পরিবর্তন না হলে মানুষের জীবনের সংকট বাড়তেই থাকবে। বর্তমান প্রেক্ষাপটে বামপন্থীদের নেতৃত্বে জনজীবনের সংকট নিয়ে গণআন্দোলনের পথেই জনগণের পক্ষের রাজনৈতিক শক্তিকে বিকশিত করতে হবে। সাংগঠনিক শক্তির দুর্বলতা ও নানা বিভ্রান্তির পরও বামপন্থীরা জনগণের পক্ষে লড়াই করার চেষ্টা করছে। সুন্দরবনের জন্য হুমকি সৃষ্টিকারী রামপাল বিদ্যুৎ প্রকল্পের প্রতিবাদে আমাদের জোট গণতান্ত্রিক বাম মোর্চার রোডমার্চ এর সাম্প্রতিক উদাহরণ। বাসদ (মার্কসবাদী) শ্রমিকশ্রেণীর নেতৃত্বে সমাজের আমূল পরিবর্তন ও শোষিত মানুষের অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে সংগ্রাম করছে। আগামী ৭ নভেম্বর একইসাথে আমাদের পার্টির ৩৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। মহান নভেম্বর বিপ্লব ও পার্টি প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আমাদের কর্মসূচিতে আপনার অংশগ্রহণ, সমর্থন ও সহযোগিতা প্রত্যাশা করছি।

মহান সোভিয়েত সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের ৯৮তম বার্ষিকী
ও বাসদ (মার্কসবাদী)-র ৩৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে

সমাবেশ

১৩ নভেম্বর শুক্রবার, বিকাল ৩টা
শাহবাগ জাতীয় যাদুঘরের সামনে

প্রধান বক্তা : কমরেড মুবিনুল হায়দার চৌধুরী

সাধারণ সম্পাদক, বাসদ (মার্কসবাদী)

RELATED ARTICLES

আরও

Recent Comments