Saturday, April 27, 2024
Homeসাম্যবাদসাম্যবাদ - জুন ২০১৪শাসকশ্রেণীর নতজানু নীতি ও ভারতীয় সাম্রাজ্যবাদী আগ্রাসনের বিরুদ্ধে জনগণের সংগ্রামী ঐক্য গড়ে...

শাসকশ্রেণীর নতজানু নীতি ও ভারতীয় সাম্রাজ্যবাদী আগ্রাসনের বিরুদ্ধে জনগণের সংগ্রামী ঐক্য গড়ে তুলুন

তিস্তার পানির দাবিতে জাতীয় কনভেনশন

DLA-23-11-a

সাম্যবাদ প্রতিবেদক
তিস্তাসহ সকল অভিন্ন নদীর পানির ন্যায্য হিস্যা আদায় ও সমন্বিত পানি ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলার দাবিতে এবং ভারতের পানি আগ্রাসন ও সরকারের নতজানু নীতির বিরুদ্ধে জনগণের সংগ্রামী ঐক্য গড়ে তোলার আহ্বান নিয়ে অনুষ্ঠিত হল জাতীয় কনভেনশন। জাতীয় প্রেসক্লাবের মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত দিনব্যাপী এ কনভেনশনে দেশবরেণ্য বুদ্ধিজীবী, নদী ও পানি সম্পদ বিশেষজ্ঞ, বাম রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ এবং তিস্তা পাড়ের ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের প্রতিনিধিরা বক্তব্য রাখেন। কনভেনশন থেকে চলমান এ আন্দোলনকে তৃণমূল পর্যন্ত ছড়িয়ে দেয়া এবং ধারাবাহিকভাবে এগিয়ে নেয়ার প্রত্যয় ঘোষণা করা হয়।
গণতান্ত্রিক বাম মোর্চার সমন্বয়কারী বাসদ কনভেনশন প্রস্তুতি কমিটির সদস্য কমরেড শুভ্রাংশু চক্রবর্ত্তীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ কনভেনশনে বক্তব্য রাখেন ভাষা সৈনিক আহমদ রফিক, অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, অধ্যাপক আহমেদ কামাল, সমুদ্র গবেষক নূর মোহাম্মদ, অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ, পানি বিশেষজ্ঞ ম. ইনামুল হক, ঢাবির আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক আকমল হেসেন, প্রকৌশলী বি ডি রহমতুল্লাহ, জাবি শিক্ষক অধ্যাপক নাসিম আখতার হোসাইন, বিশিষ্ট সাংবাদিক আবু সাঈদ খান, পরিবেশবিদ আবদুল মতিন, অর্থনীতিবিদ স্বপন আদনান, ঢাবি’র আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক তানজিম উদ্দিন খান। তিস্তা পারের ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের প্রতিনিধি হিসাবে বক্তব্য রাখেন নীলফামারীর ডিমলার কৃষক আব্বাস উদ্দিন সরকার, দিনাজপুরের চিরিরবন্দরের কৃষক হাফেজ উদ্দিন এবং রংপুরের গঙ্গাচড়ার কৃষক কাউসার আলম।
গণতান্ত্রিক বাম মোর্চার নেতৃবৃন্দের মধ্যে বক্তব্য রাখেন বাসদ কনভেনশন প্রস্তুতি কমিটির আহ্বায়ক কমরেড মুবিনুল হায়দার চৌধুরী, বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক কমরেড সাইফুল হক, ইউনাইটেড কমিউনিস্ট লীগের সাধারণ সম্পাদক মোশাররফ হোসেন নান্নু, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকী, গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টির সাধারণ সম্পাদক কমরেড মোশরেফা মিশু, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক ইয়াসিন মিয়া, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক আন্দোলনের আহ্বায়ক হামিদুল হক প্রমুখ। এছাড়া বিভিন্ন জেলার কয়েকজন প্রতিনিধি বক্তব্য রাখেন।
কমরেড মুবিনুল হায়দার চৌধুরী বলেন, ভারতের সাথে আমাদের নদী নিয়ে সমস্যা বহুদিনের। সীমান্তকে কেন্দ্র করেও একটা ধারাবাহিক সমস্যা আছে। এইসব বিষয়ের একটিরও মীমাংসা ভারত আজ পর্যন্ত করেনি। ইউরোপেও একাধিক দেশের উপর দিয়ে প্রবাহিত আন্তর্জাতিক নদী আছে। সেখানে অন্তত এই বিষয় নিয়ে কেউ কাউকে জব্দ করতে চায় না। কিন্তু ভারত আমাদের সাথে সেই সৌজন্যতাটুকুও দেখাচ্ছে না।
তিনি বলেন, আমরা যখন ভারতের সরকারের বিভিন্ন অগণতান্ত্রিক সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আন্দোলন করছি তখন আমাদের এ কথাটাও স্পষ্ট করে বলা দরকার যে, ভারতের সরকার আর ভারতের জনগণ এক নয়। ভারতের গণতান্ত্রিক জনগণের কোনো ইচ্ছাই নেই নদীর পানি নিয়ে আমাদের উপর জবরদস্তি করার। এই নদী বয়ে চলার মধ্য দিয়ে তো তাদের কোনো ক্ষতি হয়নি। এদেশের মানুষের কোনো দুর্ভোগ তারা চায় না।
কনভেনশন থেকে জেলা পর্যায়ে কৃষক-ক্ষেতমজুর-জনতার স্থানীয় কমিটি গঠন, রংপুরে উত্তরবঙ্গের আঞ্চলিক সমাবেশ, টিপাইবাধ বন্ধের দাবিতে সিলেটে আঞ্চলিক সমাবেশ, ফারাক্কার কারণে লবণাক্ততার কবলে আক্রান্ত দক্ষিণাঞ্চলকে রক্ষা এবং রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধের দাবিতে খুলনায় দক্ষিণাঞ্চলীয় সমাবেশ, সমন্বিত আঞ্চলিক পানি ব্যবস্থাপনার পক্ষে জনমত গড়ে তোলার লক্ষ্যে বিশেষজ্ঞ ও আন্দোলনকারী শক্তির প্রতিনিধিদের নিয়ে দক্ষিণ এশীয় সম্মেলন, অবিলম্বে জাতিসংঘের জলপ্রবাহ কনভেনশন ১৯৯৭ রেটিফাই করার দাবিতে আগামী জুন মাসে সমাবেশ-বিক্ষোভ, ভারতের একতরফা পানি প্রত্যাহারে বাংলাদেশের ক্ষতির শ্বেতপত্র প্রকাশ, বিভাগীয় পর্যায়ে প্রতিনিধি সভা-কনভেনশন-মতবিনিময় সভা এবং প্রয়োজনে আগামী শুষ্কমৌসুমে লংমার্চ-রোডমার্চ ইত্যাদি কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দেয়া হয়।
কনভেনশনে নেতৃবৃন্দ বলেন, আমাদের শাসকগোষ্ঠী গোটা দেশকে লুটপাট করছে, নদী-পানি-প্রকৃতি সবই লুটপাট করছে। ফলে পদ্মা-মেঘনা-যমুনার পলি-পানিতে গড়ে ওঠা বাংলাদেশের মানুষ ও প্রকৃতি ধ্বংস হয়ে গেলেও তাদের কিছু যায় আসে না। কিন্তু এ দেশ লক্ষ মানুষের আত্মদানে, রক্তে-শ্রমে-ঘামে গড়ে ওঠা দেশ। এ দেশকে রক্ষা করতে হলে এর প্রাণ-প্রবাহ নদীগুলোকে রক্ষা করতে হবে আমাদেরই। নদী রক্ষার আন্দোলন শেষ পর্যন্ত নিজেদেরই রক্ষা করার আন্দোলন। এ আন্দোলনে প্রতিটি দেশপ্রেমিক বিবেকবান মানুষকে এগিয়ে আসার জন্য নেতৃবৃন্দ আহ্বান জানান। এর পাশাপাশি ভারতের শাসকগোষ্ঠীর শোষণ-লুণ্ঠনের শিকার ভারতের সাধারণ জনগণকেও বাংলাদেশের জনগণের পাশে একে দাঁড়ানোর জন্য কনভেনশন থেকে আহ্বান জানানো হয়। কনভেনশনে বলা হয়, দু’দেশের নিপীড়িত-শোষিত জনগণের ঐক্য এবং বিশেষ করে বাংলাদেশের দেশপ্রেমিক জনগণের সংগ্রামী ঐক্যই এ আন্দোলনকে বিজয়ী করতে পারে।
এর আগে গত ১৬ জুন বাম মোর্চার উদ্যোগে তিস্তাসহ সকল অভিন্ন নদীর পানির ন্যায্য হিস্যা আদায়ের দাবিতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় অভিমুখে বিক্ষোভ মিছিল করা হয়।

RELATED ARTICLES

আরও

Recent Comments