সমাবেশ চলার এক পর্যায়ে পুলিশ সমাবেশে বাধা দেয়। দ্রব্যমূল্য নিয়ে দলের উদ্যোগে দেশের জেলায় জেলায় দুই মাস ধরে প্রচার অভিযান চলছে তাতে স্থানে স্থানে এই বাধা এসেছে। কিন্তু সূত্রাপুরে আরেক চিত্র দেখা গেল। নেতাকর্মীরা ছুটে যাওয়ার আগেই সমাবেশে দাঁড়ানো মানুষ পুলিশের সামনে দাঁড়ালেন। প্রতিবাদ করলেন। বললেন, সমাবেশ করতে দিতে হবে। তাদের বাধার মুখে পুলিশ সরে যেতে বাধ্য হয়।
মানুষকে এ বক্তব্য টেনেছে, কারণ মানুষ এরকম একটা কিছুই শুনতে চাইছিলেন। মার্কসবাদ-লেনিনবাদ-শিবদাস ঘোষের চিন্তাধারার ভিত্তিতে যুক্তি ও নৈতিকতার সুরে বর্তমানের সংকটকে ব্যাখ্যা করলে তা মানুষকে টানবেই। ফলে দেখা গেছে সমাবেশ শেষ হলেও মানুষ যাচ্ছেন না। নেতাকর্মীদের চা খাওয়াচ্ছেন, প্রবল গরমের দিনে সমাবেশ, ঠাণ্ডা পানীয় নিয়ে ছুটে আসছেন কেউ কেউ। অথচ নিজেদের জন্য হয়তো এটা কেনার কথা চিন্তা করতেন না।
সারাদেশে প্রতিবাদের ঢেউ উঠেছে। কিন্তু জিনিসপত্রের দাম কমছে না। বাড়ানো হচ্ছে না টিসিবির ট্রাকসেল, পণ্যের আওতাও এর ছোট। এরমধ্যে টিসিবির বিক্রি বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল। কিন্তু টিসিবি পর্যাপ্ত নয়। আমরা দলের পক্ষ থেকে দাবি করেছিলাম যে, সর্বজনীন রেশনের ব্যবস্থা করতে হবে এবং খাদ্যপণ্যের রাষ্ট্রীয় বাণিজ্য চালুকরতে হবে। কোন ব্যক্তিমালিক খাদ্যপণ্যের ব্যবসা করতে পারবে না।
বাস্তবে এ ধরনের কোন উদ্যোগ সরকারের দিক থেকে দেখা যাচ্ছে না। ৫টি বড় শিল্পগোষ্ঠী সয়াবিন তেলের পুরো বাজার নিয়ন্ত্রণ করে। একইভাবে চালের বাম্পার ফলন হওয়ার পরেও চালের দাম বেড়েছে। কারণ মিলাররা চাল মজুদ করেছেন। আবার চালের বাজারে এখন প্রাণ আরএফএল’সহ কর্পোরেট প্রতিষ্ঠান ঢুকেছে। ফলে চালের দাম বাড়ছে।
এরইমধ্যে রুটি, বিস্কুটসহ সকল ধরনের বেকারিপণ্যের দাম বেড়েছে। শ্রমজীবী মানুষেরা সারাদিনের কাজের ফাঁকে যে সকল খাদ্য খান, সবকিছুরই দাম বেড়েছে। ফলে তাদের ব্যয় বেড়েছে, কিন্তু আয় বাড়েনি। এর পরোক্ষ প্রভাব সামনে আসছে না। হাতে টাকা না থাকায় ছেলেমেয়েদের শিক্ষায় তারা টাকা খরচ করতে পারছেন না। চিকিৎসা করাতে পারছেন না। এ এক মানবেতর জীবন, আজ যা দেশের কোটি কোটি মানুষের প্রতিদিনের জীবন।
লড়াই ছাড়া এ অবস্থার পরিবর্তন হবে না। ব্যবস্থার পরিবর্তন ছাড়া এ জীবনেরও কোন পরিবর্তন আসবে না। শুধু খাবারের জন্য লড়াই করতে হচ্ছে আজ, কিন্তু শ্রমজীবীদের লড়াই তো কোনরকমে বাঁচার জন্য নয়, মর্যাদার সাথে বাঁচার জন্য।