Thursday, April 18, 2024
Homeফিচারসর্বজনীন রেশন ও খাদ্যপণ্যের রাষ্ট্রীয় বাণিজ্য চালু করতে হবে

সর্বজনীন রেশন ও খাদ্যপণ্যের রাষ্ট্রীয় বাণিজ্য চালু করতে হবে

৪ জুন, শনিবার। ঢাকায় বাহাদুর শাহ্ পার্কে সূত্রাপুর আঞ্চলিক শাখার উদ্যোগে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদে সভা হচ্ছিল। স্থানীয় মানুষ শুনছিলেন বাসদ (মার্কসবাদী) সংগঠকদের বক্তব্য। এই নেতাকর্মীরা তাদের কাছে নতুন নন। কিছুদিন আগেও এই বাহাদুর শাহ পার্কে শত শত দর্জি শ্রমিকদের জড়ো হতে তারা দেখেছেন মজুরি বৃদ্ধির দাবি নিয়ে। রেডিমেইড দর্জি শ্রমিকরা কোনরকমে বেঁচে থাকার মজুরি যখন পাচ্ছিলেন না, তখন এরাই দর্জি শ্রমিকদের সংগঠিত করে লড়াই করেছে। আন্দোলনের চাপে দর্জি শ্রমিকদের মজুরি বেড়েছিল। ফলে এই এলাকার চায়ের দোকানদার থেকে সদরঘাটের শ্রমিক–তারা জানেন এই দল কাদের দাবি নিয়ে রাস্তায় থাকে।

 

সমাবেশ চলার এক পর্যায়ে পুলিশ সমাবেশে বাধা দেয়। দ্রব্যমূল্য নিয়ে দলের উদ্যোগে দেশের জেলায় জেলায় দুই মাস ধরে প্রচার অভিযান চলছে তাতে স্থানে স্থানে এই বাধা এসেছে। কিন্তু সূত্রাপুরে আরেক চিত্র দেখা গেল। নেতাকর্মীরা ছুটে যাওয়ার আগেই সমাবেশে দাঁড়ানো মানুষ পুলিশের সামনে দাঁড়ালেন। প্রতিবাদ করলেন। বললেন, সমাবেশ করতে দিতে হবে। তাদের বাধার মুখে পুলিশ সরে যেতে বাধ্য হয়।

 

শুধু এই ঘটনাই নয়। সারাদেশে এই দলের নেতাকর্মীরা যখন সমাবেশে বক্তব্য রেখেছেন। পথচারীরা থেমে দাঁড়িয়েছেন, কথা শুনেছেন। কোথাও দলের হয়েতো পাঁচজন সংগঠক দাঁড়িয়েছেন। একজন বক্তব্য দিচ্ছেন, কেউ দলের দাবি লেখা ফেস্টুন নিয়ে দাঁড়িয়ে, কেউ প্রচারপত্র বিলি করছেন। দলের সংগঠকদের দেয়া সেই বক্তব্য মানুষকে টেনেছে। শুধু দ্রব্যমূল্য বাড়ছে, মানুষ খেতে পারছে না, তাদের রেশন দরকার, সামাজিক সুরক্ষা দরকার–এই কথাই বক্তারা বলছেন না। তারা দেখাচ্ছেন কেন এমন হয়, কী তার কারণ, কোন সে সমাজব্যবস্থা যার কারণে এমন ঘটে। তারা সাথে সাথে এও দেখাচ্ছেন এই ব্যবস্থা শুধু মানুষকে অর্থনৈতিকভাবে নিঃশেষ করে দিচ্ছে না, তাকে নৈতিক দিক থেকেও পঙ্গু করে ফেলছে। ফলে এতো অন্যায়ের বিরুদ্ধেও গড়ে উঠছে না কোন শক্তিশালী অন্দোলন। আন্দোলনের নেতারা বিক্রি হয়ে যাচ্ছে। লেখক-সাংবাদিক-সাহিত্যিকরা বিক্রি হয়ে যাচ্ছে।

 

মানুষকে এ বক্তব্য টেনেছে, কারণ মানুষ এরকম একটা কিছুই শুনতে চাইছিলেন। মার্কসবাদ-লেনিনবাদ-শিবদাস ঘোষের চিন্তাধারার ভিত্তিতে যুক্তি ও নৈতিকতার সুরে বর্তমানের সংকটকে ব্যাখ্যা করলে তা মানুষকে টানবেই। ফলে দেখা গেছে সমাবেশ শেষ হলেও মানুষ যাচ্ছেন না। নেতাকর্মীদের চা খাওয়াচ্ছেন, প্রবল গরমের দিনে সমাবেশ, ঠাণ্ডা পানীয় নিয়ে ছুটে আসছেন কেউ কেউ। অথচ নিজেদের জন্য হয়তো এটা কেনার কথা চিন্তা করতেন না।

 

সারাদেশে প্রতিবাদের ঢেউ উঠেছে। কিন্তু জিনিসপত্রের দাম কমছে না। বাড়ানো হচ্ছে না টিসিবির ট্রাকসেল, পণ্যের আওতাও এর ছোট। এরমধ্যে টিসিবির বিক্রি বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল। কিন্তু টিসিবি পর্যাপ্ত নয়। আমরা দলের পক্ষ থেকে দাবি করেছিলাম যে, সর্বজনীন রেশনের ব্যবস্থা করতে হবে এবং খাদ্যপণ্যের রাষ্ট্রীয় বাণিজ্য চালুকরতে হবে। কোন ব্যক্তিমালিক খাদ্যপণ্যের ব্যবসা করতে পারবে না।

 

বাস্তবে এ ধরনের কোন উদ্যোগ সরকারের দিক থেকে দেখা যাচ্ছে না। ৫টি বড় শিল্পগোষ্ঠী সয়াবিন তেলের পুরো বাজার নিয়ন্ত্রণ করে। একইভাবে চালের বাম্পার ফলন হওয়ার পরেও চালের দাম বেড়েছে। কারণ মিলাররা চাল মজুদ করেছেন। আবার চালের বাজারে এখন প্রাণ আরএফএল’সহ কর্পোরেট প্রতিষ্ঠান ঢুকেছে। ফলে চালের দাম বাড়ছে।

 

এরইমধ্যে রুটি, বিস্কুটসহ সকল ধরনের বেকারিপণ্যের দাম বেড়েছে। শ্রমজীবী মানুষেরা সারাদিনের কাজের ফাঁকে যে সকল খাদ্য খান, সবকিছুরই দাম বেড়েছে। ফলে তাদের ব্যয় বেড়েছে, কিন্তু আয় বাড়েনি। এর পরোক্ষ প্রভাব সামনে আসছে না। হাতে টাকা না থাকায় ছেলেমেয়েদের শিক্ষায় তারা টাকা খরচ করতে পারছেন না। চিকিৎসা করাতে পারছেন না। এ এক মানবেতর জীবন, আজ যা দেশের কোটি কোটি মানুষের প্রতিদিনের জীবন।

 

লড়াই ছাড়া এ অবস্থার পরিবর্তন হবে না। ব্যবস্থার পরিবর্তন ছাড়া এ জীবনেরও কোন পরিবর্তন আসবে না। শুধু খাবারের জন্য লড়াই করতে হচ্ছে আজ, কিন্তু শ্রমজীবীদের লড়াই তো কোনরকমে বাঁচার জন্য নয়, মর্যাদার সাথে বাঁচার জন্য।

সাম্যবাদ জুন ২০২২

RELATED ARTICLES

আরও

Recent Comments