Friday, April 26, 2024
Homeফিচারব্যবসায়ীদের বাজেট জনগণকে সুরক্ষা দেবে কি?

ব্যবসায়ীদের বাজেট জনগণকে সুরক্ষা দেবে কি?

২০২০ ও ২০২১, করোনা মহামরি চলাকালীন এ দুই বছরে নতুন করে দরিদ্র হয়েছে সাড়ে তিন কোটি মানুষ। ১০ কোটি ২২ লাখ মানুষের আয় কমেছে। মাঝারি, ক্ষুদ্র, অতিক্ষুদ্র ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ৩৭ শতাংশ মানুষ কাজ হারিয়েছেন। ফলে ২০২২-২৩ সালের বাজেটে এমনিতেই সামাজিক সুরক্ষা খাতে বিশেষ বরাদ্দ প্রয়োজনীয় ছিল। প্রয়োজনীয় ছিলো নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য ও পরিষেবা ভতুর্কি মূল্যে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের কাছে পৌঁছে দেয়ার জন্য বরাদ্দ। প্রয়োজনীয় ছিল বিলাসদ্রব্যে কর বসানো, সেগুলোর আমদানি নিরুৎসাহিত করা ও কর্পোরেট কর বৃদ্ধির মাধ্যমে অতি ধনী গোষ্ঠীর কাছ থেকে বেশি পরিমাণ রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করা।

 

কিন্তু ঘটছে তার উল্টোটা। মহামারি চলাকালীন বাজেটে আমরা দেখেছি সরকার ভতুর্কি ক্ষতিগ্রস্ত জনগণকে দিচ্ছেন না, দিচ্ছেন বড় বড় ব্যবসায়ীদের। গার্মেন্টস ব্যবসায়ীরা বেশি সুবিধা পাচ্ছেন অভিযোগ করে অন্যান্য খাতের শিল্পপতিরা তাদের হক চাইছেন। সরকারি নীতিনির্ধারকরা তাদের সাথে সমঝোতা বৈঠক করছেন। রাষ্ট্রীয় তহবিলের একচ্ছত্র মালিকানা ব্যবসায়ীদের, যদিও সেটা তৈরি হয় জনগণের করের টাকায়।

 

‘গেল গেল’ রব তুলে ব্যবসায়ীরা রাষ্ট্রীয় তহবিলের টাকা ভাগ করে নেয়ার জন্য যে দৌড়ঝাঁপ শুরু করলেন, অচিরেই প্রমাণিত হলো সেগুলো ছিল অভিনয়মাত্র। ২০২০ সালের সেপ্টেম্বরেই, অর্থাৎ করোনা সংক্রমণের মধ্যেই দেখা গেলো যে, আগস্ট মাসে ৩৩৬ কোটি ৩৩ লক্ষ ডলারের তৈরি পোষাক রপ্তানী হয়েছে যা ২০১৯ সালের একই সময়ের চেয়ে ৪৭ শতাংশ বেশি। অর্থাৎ করোনাকালে ব্যবসা কমেনি, বেড়েছে।

 

কিন্তু তাতে গার্মেন্টসের ছাঁটাই বন্ধ হলো না। করোনার সময় ঝুঁকি নিয়ে উৎপাদন চালালেও এর বিপরীতে বাঁচার মজুরিও শ্রমিকরা পেলেন না। অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে কাজ করা প্রায় ৫ কোটি শ্রমিক অর্ধভুক্ত, অভুক্ত অবস্থায় থাকলেন।

 

এই মানুষদের সুরক্ষা দেয়া তো দূরের কথা, করোনা পরবর্তীকালে দ্রব্যমূল্য উল্কাগতিতে বাড়তে থাকল। চাল, ডাল, সয়াবিন তেলসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম বাড়ল। কাটা ঘায়ে আগুনের ছ্যাকা দিতে গ্যাস ও পানির দাম বাড়ানো হলো। বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব করা হলো। সরকার নিজেই মূল্যস্ফীতি স্বীকার করে নিয়েছেন। কিন্তু যে তথ্য দিচ্ছেন সেটা প্রকৃত মূল্যস্ফীতির চেয়ে অনেক কম। সরকার বলছেন মূল্যস্ফীতি ৬.২২%, বাস্তবে মূল্যস্ফীতি খাদ্যপণ্যের ক্ষেত্রে কোথাও কোথাও ১৫% এরও অধিক।

 

ফলে দরিদ্র-নিম্নবিত্ত-মধ্যবিত্ত মানুষের জন্য রেশন ও স্বাস্থ্যসহ অন্যান্য সামাজিক সুরক্ষা এ সময়ে কত জরুরী তা বলার অপেক্ষা রাখে না। কিন্তু বাজেট সম্পর্কে এ পর্যন্ত যতটুকু জানা গেছে বা প্রাক বাজেট আলোচনা যতটুকু এসেছে তাতে এক্ষেত্রে সেরকম কিছু দেখা যাচ্ছে না। সামাজিক সুরক্ষা খাতের বরাদ্দ তো বাড়ছেই না, উপরন্তু এ খাতের বেশিরভাগ অর্থই অবসরপ্রাপ্তদের পেনশন খাতে ব্যয় হয়, খাদ্য নিরাপত্তা বা অন্যান্য প্রয়োজনীয় খাতে ব্যয় হয় কম। অর্থাৎ সাধারণ জনগণের উপর নতুন করে অর্থনৈতিক সংকট ও মূল্যস্ফীতিসহ অন্যান্য চাপ বাড়লেও নতুন বাজেটে তার কোন ছাপ থাকবে না। নতুন বাজেটে সেই পুরনো চিত্রই আমরা দেখবো–জনকল্যাণমূলক খাত, সামাজিক সুরক্ষামূলক খাতে বরাদ্দ কমানো আর ব্যবসায়ীদের প্রণোদনা বৃদ্ধি। বাজেট প্রস্তাবনার পর ব্যবসায়ীদের প্রতিক্রিয়া অনুসারে তাদের স্বার্থে কিছুটা অদলবদল। অর্থাৎ সেই তথাকথিত জনগণের সরকারের তথাকথিত জনগণের বাজেট, কিন্তু ব্যবসায়ীদের স্বার্থে।

সাম্যবাদ জুন ২০২২

RELATED ARTICLES

আরও

Recent Comments