Wednesday, April 24, 2024
Homeঅনুশীলনটিকফা : সাম্রাজ্যবাদীদের নখরে ক্ষতবিক্ষত মানুষের অধিকার

টিকফা : সাম্রাজ্যবাদীদের নখরে ক্ষতবিক্ষত মানুষের অধিকার

TICFA[dropcap]অ[/dropcap]বশেষে রাজনৈতিক অস্থিরতার সুযোগ নিয়ে গত ২৫ নভেম্বর ২০১৩ শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন নির্বাচনকালীন সরকার মার্কিনদের সাথে TICFA  চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। দীর্ঘ ১২ বছরের চেষ্টার পর যুক্তরাষ্ট্র এ চুক্তি স্বাক্ষরে সক্ষম হল। সংবাদপত্রের খবর অনুযায়ী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ২০০২ সাল থেকে TIFA (Trade & Investment Framework Agreement) নাম নিয়ে চুক্তিতে বাংলাদেশকে রাজি করাতে কাজ শুরু করে। যুক্তরাষ্ট্রের এ্রশিয়-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের বাণিজ্যনীতি বিষয়ক সিনিয়র উপদেষ্টা বেটসি-ই-স্টিলম্যানের মতানুসারে ইঘচ নেতৃত্বাধীন জোট সরকার ২০০৫ সালে এ চুক্তির খসড়া কোন রকম পরিবর্তন ছাড়াই গ্রহণ করে। এরপর ঐ সরকার চুক্তিটি স্বাক্ষরের চেষ্টা করে। কিন্তু বামপন্থী দলগুলোসহ সচেতন নাগরিকবৃন্দের সমালোচনার কারণে চুক্তি স্বাক্ষর থেকে বিরত থাকে। পরবর্তীতে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে এবং ২০০৯ সালে মহাজোট সরকারের সময়ও এ চুক্তি স্বাক্ষরের উদ্যোগ নেয়া হয়। কিন্তু প্রত্যেকবারই চুক্তিটি নিয়ে প্রচুর সমালোচনা হয়। পাশাপাশি মার্কিন ও বাংলাদেশ সরকারের মধ্যে চুক্তির বেশ কিছু বিষয়ে দরকষাকষি চূড়ান্ত না হওয়ায় চুক্তিটি স্বাক্ষর করা যায়নি। এই সমালোচনাকে সামাল দেয়ার জন্য ঞওঋঅ কে পরবর্তীতে TECF (Trade and Economic Co-operation Forum) এবং TICFA (Trade and Investment Co-operation Framework Agreement) নামের মাধ্যমে প্রকাশ করা হয়। এদেশীয় শাসকগোষ্ঠী জনগণকে বিভ্রান্ত করে, চুক্তির ধারা উপধারা গোপন করে এবং সংসদে সেই অর্থে কোনো আলাপ আলোচনা ছাড়াই বেশ কয়েকবার চুক্তি স্বাক্ষরের উদ্যোগ নেয়। কিন্তু জনগণের বাধার মুখে তারা প্রায় ১ যুগ এ চুক্তি স্বাক্ষরে সক্ষম হয় নি। কিন্তু এ সময়ে গার্মেন্টস সেক্টরের মুনাফালিপ্সু মালিকদের দ্বারা তাজরীন গার্মেন্টস এবং রানাপ্লাজায় শ্রমিক হত্যার ফলে সৃষ্ট চাপ এবং বুর্জোয়াদলগুলোর ক্ষমতা দখলের কোন্দলের সুযোগ নিয়ে স্বাক্ষর হয়ে গেল TICFA চুক্তি।

এ দেশের লক্ষ কোটি মানুষের জীবনকে বিপর্যস্ত করে শতমানুষকে হত্যা করে যে দলগুলো নির্বাচন নিয়ে একটা ঐক্যমতে পৌঁছাতে পারে না তারা কিন্তু TICFA চুক্তির বিষয়ে একমতে পৌঁছেছে। শেখ হাসিনা নেতৃত্বাধীন নির্বাচনকালীন সরকার যেমন এ চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছে, বিএনপি তেমনি সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছে চুক্তিটি স্বাক্ষরিত হওয়ায়। কারণ তারা উভয়েই মনে করে এই চুক্তিটি ক্ষমতাশালী মার্কিনীদের সন্তুষ্ট করে তাদের ক্ষমতার মসনদে বসবার পথ পরিষ্কার করবে। এ সময়ে শুধুমাত্র বামপন্থী দলগুলোই দেশপ্রেমিক জনগণকে সাথে নিয়ে এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করে যাচ্ছে।

টিকফা নিছক একটি বাণিজ্য চুক্তি নয়
TICFA সম্পর্কে বলা হয় এটি শুধুমাত্র একটি বাণিজ্য চুক্তি। কিন্তু মন্ত্রীসভায় অনুমোদিত চুক্তির খসড়া এবং বিভিন্ন দেশের সাথে মার্কিনিদের স্বাক্ষরিত ঞওঋঅ চুক্তি বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় এটি শুধুমাত্র একটি বাণিজ্য চুক্তি নয়। কারণ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে যেসব দেশের সবচেয়ে বেশি বাণিজ্য রয়েছে যেমন – কানাডা, চীন, ফ্রান্স, মেক্সিকো, জাপান, জার্মানি ইত্যাদি এদের কারও সাথেই TICFA চুক্তি নেই। অপরদিকে যাদের সাথে TICFA/TIFA চুক্তি রয়েছে যেমন- পাকিস্তান, শ্রীলংকা, সৌদি আরব, উগান্ডা, আরব-আমিরাত ইত্যাদি দেশের সাথে মার্কিনিদের সম্পর্কটা শুধুমাত্র বাণিজ্যকেন্দ্রিক নয়। এ সকল স্বল্পোন্নত দেশের বহুপাক্ষিক দেশের সাথে বাণিজ্য চুক্তি থাকার পরও মার্কিনিরা দ্বি-পাক্ষিক চুক্তিতে বাধ্য করছে। কারণ তারা আশংঙ্কা করে, এই স্বল্পোন্নত দেশগুলো নিজেরা জোটবদ্ধ হয়ে মার্কিন প্রভাব থেকে বের হয়ে আসতে পারে, যা মার্কিনিদের বিনিয়োগের ক্ষেত্রকে আরও সংকুচিত করে ফেলবে। তাই এটি মার্কিনদের জন্য স্রেফ একটা বাণিজ্য চুক্তি নয় বরং তাদের রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক সামরিক প্রভাব বিস্তারের আরেকটি অস্ত্র।

মার্কিন আক্রমণকে তীব্রতর করতেই এই চুক্তি
এ চুক্তি স্বাক্ষরের জন্য বার বার মার্কিনদের সাথে বাংলাদেশের শুল্কমুক্ত সুবিধা বা বাণিজ্য অগ্রাধিকার ব্যবস্থার (GSP) বিষয়কে সামনে আনা হয়েছে। মার্কিন রাষ্ট্রদূত ড্যান মজিনা ২০১৩ সালের ২৮ জুলাই এক বক্তব্যে বলেন যে, “TICFA চুক্তি সই না করলে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশ পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার পাবে না।” একটু হিসেব করলেই পরিষ্কার হবে তারা কতটুকু শুল্কমুক্ত সুবিধা বাংলাদেশকে দিয়ে থাকে। ‘দোহা’ নীতি অনুসারে মার্কিন বাজারে রপ্তানিকৃত বাংলাদেশি পণ্যের ৯৭ ভাগকে শুল্কমুক্ত সুবিধা দেবার কথা। অথচ মার্কিনিরা সে সকল বাংলাদেশি পণ্যকেই শুল্কমুক্ত সুবিধা দেয় যাদের রপ্তানি খুবই কম। অপরদিকে যে গার্মেন্টস পণ্য মার্কিন বাজারে সর্বাধিক রপ্তানি হয় তার ক্ষেত্রে বাংলাদেশকে ১৫% কর দিতে হয়। এই একই গার্মেন্টস্ পণ্যের ক্ষেত্রে চীন মার্কিনিদের মাত্র ৩% কর দেয়। তাছাড়া শুধুমাত্র এ বছরই বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রকে কর বাবদ প্রদান করেছে ৫৬০০ কোটি টাকা। এই টাকার পরিমাণ বাংলাদেশ মার্কিনদের কাছ থেকে বিভিন্ন খাতে যে পরিমাণ ঋণ গ্রহণ করে তার প্রায় ছয়গুণ বেশি। সুতরাং এতে এটা প্রমাণিত হয় যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকে এমনিতে শুল্কমুক্ত সুবিধা তেমন একটা দেয় না। তাছাড়া তারা আমাদেরকে তো টাকা দেয়ই না উপরন্তু আমাদের কাছ থেকে আরও বেশি নেয়। তাই এই এঝচ সুবিধার বিষয় সামনে আনার একটা মাত্রই কারণ, তা হল TICFA কে জায়েজ করে নেয়া।

এ চুক্তিটি স্বাক্ষরের ক্ষেত্রে যে সকল বিষয়ে বাংলাদেশ লাভবান হবে বলে দাবি করা হচ্ছে তার মধ্যে রয়েছে কারখানাগুলোতে কাজের ক্ষেত্রে শ্রমিক বান্ধব পরিবেশ নিশ্চিত করা, মেধাসত্ত্ব আইনের যথাযথ প্রয়োগ। তাছাড়া আরও দাবি করা হচ্ছে এ চুক্তির ফলে এদেশে মার্কিন বিনিয়োগ বৃদ্ধি পেলে দেশ আরও উন্নত হবে, মার্কিন মুলুকে এদেশের পুঁজিও বিনিয়োগ করা যাবে। তাতে করে দেশের অর্থনীতি সমৃদ্ধ হবে। একটু গভীরভাবে বিবেচনা করলেই এ কথাগুলোর অসারতা ধরা পড়ে। বরং চুক্তির ফলে এদেশে মার্কিনিদের প্রভাব আরও বৃদ্ধি পাবে, অপরদিকে সাধারণ মানুষের স্বার্থ ক্ষতির সম্মুখীন হবে।

এ চুক্তির মাধ্যমে মার্কিন নজরদারি বৃদ্ধি করে কাজের ক্ষেত্রে শ্রমিকবান্ধব পরিবেশ নির্মাণের কথাটা কোনোভাবেই বিশ্বাসযোগ্য নয়। কারণ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তাদের অর্থনীতির ভিত্তি নির্মাণ করেছে আমাদের মতো দেশগুলোতে ঔপনিবেশিক সাম্রাজ্যবাদী শোষণ চালিয়ে, নিজের দেশের শ্রমিকদের শ্রম শোষণ করে, মজুরি-দাস বানিয়েই। তাছাড়া তাদের এদেশে বিনিয়োগের এত আগ্রহের কেন্দ্র বিন্দুতেই রয়েছে এদেশের শ্রমিকদের সস্তা শ্রম। প্রকৃত পক্ষে শ্রমিক অধিকার নিশ্চিত করার বিষয়টি মার্কিনিরা সামনে এনেছে নিজেদের স্বার্থ রক্ষার্থেই। যাতে কোনো কিছু আদায় করতে, স্বার্থসুবিধা হাসিল করতে তারা ‘শ্রমিক অধিকার রক্ষা হচ্ছে না’ এই হুমকি দিয়ে সেটা আদায় করে নিতে পারে।

মেধাসত্ত্ব আইনের মাধ্যমে বহুজাতিক কোম্পানি হাতিয়ে নেবে লক্ষ-কোটি ডলার
চুক্তিটিতে মেধাসত্ত্ব সংরক্ষণের বিষয়টিকেও সামনে আনা হয়েছে মার্কিন Corporate House-এর স্বার্থ সংরক্ষণের জন্যই। অনুমোদিত খসড়া চুক্তিটিতে বলা আছে “বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পত্তির অধিকার পর্যাপ্ত সংরক্ষণ ও বাস্তবায়ন এবং ঞজওচঝ সহ নানা আন্তর্জাতিক চুক্তি মেনে চলার ক্ষেত্রে গুরুত্ব আরোপ করবে।” মেধাসত্ত্ব আইনের কারণ হিসেবে বলা হয়ে থাকে এটা আবিষ্কারকদের উৎসাহিত করার জন্য, তাদেরকে আর্থিকভাবে লাভবান করার জন্যই করা উচিত। কিন্তু এ সময়ে বিজ্ঞানীদের উদ্ভাবিত আবিষ্কার, তাঁর জ্ঞান ও মেধা কিনে নেয় বড় বড় Corporate House-গুলো। তাই তার আবিষ্কারগুলো পেটেন্ট করার পর সাধারণত তা থেকে লাভবান হয় Corporate House-গুলোই। অথচ অতীত দিনে  মানুষের সংগ্রামে অর্জিত জ্ঞানের উপর দাড়িয়ে সৃষ্ট নতুন উদ্ভাবনগুলো সমাজের সকলের প্রয়োজনেই ব্যবহৃত হওয়া উচিত, এটাই নৈতিক। আর এই নৈতিকতাকে যারা ধারণ করেছিলেন সেই মহান বিজ্ঞানী লুইপাস্তুর, মাদাম কুরী কিংবা আইনস্টাইন কিন্তু তাঁদের আবিস্কারগুলোকে পেটেন্ট করেন নি। বাংলাদেশ  গ্যাট-এর বিধি অনুযায়ী ২০২১ সাল পর্যন্ত মেধাসত্ত্বের চাপমুক্ত ছিল। এ কারণে এদেশে ঔষধ শিল্প বিকশিত হয়েছে, computer এবং IT sector-এর প্রসার ঘটেছে। TICFA চুক্তির ফলে মার্কিনদের সাথে টিকে থাকার প্রশ্নে ঔষধের দাম বৃদ্ধি পাবে। কারণ মেধাসত্ত্ব চুক্তির ফলে বহু ঔষধ তৈরির প্রক্রিয়া বহাল রাখতে উচ্চ অংকের রয়ালিটি দিতে হবে এদেশের মালিকদের। আর এ টাকা আদায় হবে জনগণের কাছ থেকে ঔষধের দাম বৃদ্ধি করেই। চুক্তিটি স্বাক্ষর করা মাত্রই দু’দফা বেড়েছে ঔষধের দাম। তাছাড়া এক সমীক্ষায় দেখা যায়, বাংলাদেশে ব্যবহৃত ৯২% software-ই pyrated। মেধাসত্ত্ব আইন জোরদার হলে এই ঝড়ভঃধিৎব-গুলোই উচ্চমূল্যে ক্রয় করতে হবে। যা সাধারণ মানুষের জন্য অসম্ভব হয়ে দাঁড়াবে। কৃষিক্ষেত্রেও মেধাসত্ত্ব আইন প্রয়োগ করে কৃষকদের এদেশীয় বহু চাষ বাসের পদ্ধতি প্রণালী, উৎপাদন কাঠামো কেড়ে নেয়া হতে পারে। শস্যবীজ সংরক্ষণ বাধাগ্রস্ত হতে পারে। এতে করে বীজের দাম এবং কৃষি পণ্যের দাম বহুগুণ বৃদ্ধি পাবে। তাছাড়া বাসমতি চাল, চিরতার রস, দার্তনসহ হেন কিছু নেই যা মার্কিনরা company পেটেন্ট করে রাখে নি। TICFA চুক্তির ফলে এসব নিয়ে গবেষণা বা বাণিজ্যিক ব্যবহার করতে চাইলে তারা উচ্চমূল্যের রয়ালিটি দাবি করতে পারে।

এ চুক্তির ফলে উভয় দেশই বিনিয়োগের মধ্য দিয়ে লাভবান হবে বলে যে দাবি করা হয়েছে তা কোনো ভাবেই বাস্তবসম্মত নয়। কারণ বাংলাদেশের স্বল্প পুঁজির পক্ষে মার্কিনিদের সাথে প্রতিযোগিতা করে টিকে থাকা প্রায় অসম্ভব। তাই এর মধ্য দিয়ে এ দেশের অর্থনৈতিক উন্নতি হবে এটা পুরোপুরি অবাস্তব কথা। এছাড়া মার্কিনদের এদেশে বিনিয়োগের ফলে দেশীয় পুঁজিপতিরা প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে পণ্যের দাম আরও বাড়িয়ে দেবে যাতে করে সাধারণ মানুষ আরও সমস্যার মধ্যেই পড়বে।

শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ সেবা খাতে সাম্রাজ্যবাদী আগ্রাসন তীব্রতর হবে
এছাড়া এখানে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হয়েছে সেবা খাতকে। এই সেবা খাতের মধ্যে রয়েছে দেশের জ্বালানি, গ্যাস, বিদ্যুৎ, পানি, শিক্ষা, চিকিৎসা, বন্দর, পরিবহন ইত্যাদি। সমাজতান্ত্রিক শিবিরের ভাঙনের পর পুঁজিবাদী রাষ্ট্রগুলো তাদের কল্যাণমুখী অর্থনীতির ভোল পাল্টেছে। তাই রাষ্ট্রায়ত্ত সেবামূলক প্রতিষ্ঠানগুলোকে সুপরিকল্পিত ভাবেই অকার্যকর প্রতিষ্ঠানে পরিণত করা হচ্ছে। একই সাথে উৎসাহিত করা হচ্ছে বেসরকারি বিনিয়োগ। কারণ সেবা খাতে রয়েছে সুনিশ্চিত মুনাফা আর নগণ্য ঝুঁকি। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, বাংলাদেশ ক্রমাগতই স্বাস্থ্য, শিক্ষা প্রভৃতি খাতগুলোতে তার বাজেট ক্রমাগত কমিয়ে চলেছে। তাই সরকারি হাসপাতালগুলোকে একদিকে যেমন অকার্যকারী প্রতিষ্ঠানে পরিণত করা হচ্ছে, তেমনি অপরদিকে Private Clinic, Pathology, Diagnostic Centre-এর সংখ্যা বেড়েই চলেছে।

শিক্ষাক্ষেত্রেও প্রায় একই অবস্থা প্রাথমিক স্তর থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত সর্বত্রই চৎরাধঃরুধঃরড়হ এর হার বেড়েই চলেছে। উচ্চশিক্ষার আক্রমণ আসছে নানা দিক থেকে। বিশ্বব্যাংকের সুপারিশে টএঈ-র ২০ বছর মেয়াদী কৌশল পত্রের মধ্যদিয়ে অভ্যন্তরীণ আয় বাড়ানোর নাম করে শিক্ষার্থীদের উপর নিত্য নতুন ফি আরোপ করা হচ্ছে। নতুন করে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে উচ্চশিক্ষার কৌশলপত্র (হেক্যাপ) এবং পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপের (পিপিপি) মাধ্যমে উচ্চশিক্ষার উপর সামগ্রিক নিয়ন্ত্রণ আরোপ করার পরিকল্পনা করা হয়েছে। হেক্যাপের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে যতটুকু গবেষণা হচ্ছে সেটিকেও সাম্রাজ্যবাদী বহুজাতিক কোম্পানির স্বার্থে ব্যবহার করা হবে। নতুন করে টিকফা চুক্তির মাধ্যমে বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা খোলার পরিকল্পনার কথা বলা হয়েছে। এর মাধ্যমে উচ্চশিক্ষার বাণিজ্যিকীকরণ আরও ত্বরান্বিত হবে। বিশ্বব্যাপী কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্র্যান্ড ভ্যালু (Brand Value) তৈরি করে তা দেশে দেশে ফেরি করছে এই শিক্ষা ব্যবসায়ীরা। সেই পরিকল্পনার অংশ হিসেবে টিকফাতে এই প্রস্তাবনা আনা হয়েছে। এছাড়া এদেশের জ্বালানীসম্পদ, গ্যাস, বিদ্যুৎ, বন্দর নিয়ে নানাবিধ দেশীয় আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র-চক্রান্ত চলছেই।

তাই TICFA চুক্তির মধ্য দিয়ে মার্কিনদের বিনিয়োগের পথ প্রশস্ত হলে সেবাখাতে তা নিশ্চিতভাবেই বাড়বে। রাষ্ট্রীয় বাজেট সংকোচন করে সাধারণ মানুষকে উচ্চমূল্যে এগুলোকে নিতে বাধ্য করা হবে। যেমন থাইল্যান্ডকে TICFA স্বাক্ষর করার পর সেবাখাতগুলোকে বেসরকারীকরণ করতে বাধ্য করা হয়েছে।

তাই একথা বলা যায়, মার্কিনিদের একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তারে এবং মার্কিনপুঁজি বিনিয়োগের মধ্য দিয়ে শোষণব্যবস্থাকে আরও জোরদার করতে এই TICFA স্বাক্ষর করা হয়েছে। এটি এ দেশের মানুষের স্বার্থের পরিপন্থী। আমাদের দেশের পুঁজিপতিশ্রেণী নিজেদের স্বার্থ হাসিলের জন্য, ক্ষমতায় আসীন হওয়ার জন্য শুধু নরবলি দিয়েই থামছে না, নিজ স্বার্থ চরিতার্থ করতে সাধারণ মানুষের ভবিষ্যতকেও নির্দ্বিধায় বলি দেয়ার আয়োজন করেছে। তাই দেশের গণতান্ত্রিক শক্তিসহ চেতনা সম্পন্ন সকল মানুষকেই এই চুক্তির বিরোধিতা করতে হবে। এর ভয়াবহতার স্বরূপ উন্মোচন করে জনসাধারণকে নিয়েই প্রবল প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।

 অনুশীলন : সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট মুখপত্র

 

RELATED ARTICLES

আরও

Recent Comments